MTB Logo
Deposit

নিউজ আর্কাইভ

নোবেলজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন উদ্বোধন করলেন আন্তর্জাতিক পাঠচক্র বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশন ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি (এমটিবি) কর্তৃক আয়োজিত “ব্যক্তির জীবনকুশলতা ও সামাজিক কল্যাণ” শীর্ষক পাঠচক্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক সংগঠন বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের প্রধান অংশীদার হিসেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি (এমটিবি)-এর সহযোগিতায়, আন্তর্জাতিক পাঠচক্র- ১৪: ব্যক্তির জীবনকুশলতা ও সামাজিক কল্যাণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিগত শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে যথাযোগ্য ও ভাবগাম্বীর্য পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১৬টি দেশের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ছয় মাসব্যাপী ১৩টি সেশনের এক যাত্রা, যেখানে আলোচিত হবে অর্থনীতি, নৈতিকতা, কল্যাণ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আন্তঃসম্পর্ক। নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের সক্ষমতার পন্থা ও সামাজিক চয়ন তত্ত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে এই পাঠচক্রের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। তাঁর স্বভাবসুলভ গভীরতা ও বিনয়ে তিনি অংশগ্রহণকারীদের স্মরণ করিয়ে দেন—শুধু সুখ কিংবা আয় উন্নয়নের মানদণ্ড হতে পারে না। উভয়েরই গুরুত্ব আছে, তবে প্রকৃত মানদণ্ড হলো মানুষ কতটা স্বাধীনতা ও সামর্থ্য ভোগ করছে তাদের পছন্দের জীবনযাপন করার জন্য। অধ্যাপক সেনের ভাষায়:—“আমরা এমন এক পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষা করি যেখানে আমরা সত্যিকার অর্থে বাঁচতে চাই”—তাঁর এই অন্তর্দৃষ্টি এখন এই পাঠচক্রের একটি স্থায়ী বৌদ্ধিক ভিত্তি হয়ে উঠেছে।

এই পাঠচক্র গড়ে উঠেছে বাঙলার পাঠশালার আগের পাঠচক্রের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে— যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ১২তম পাঠচক্র— ‘বাংলা ভাষায় অমর্ত্য সেন পাঠচক্র’। সেখানে ১২ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পণ্ডিত অধ্যাপক সেনের বিভিন্ন কাজ নিয়ে আলোচনা করেন। এগুলোর ভিতর অধ্যাপক কৌশিক বসুর (কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র) “সামাজিক চয়ন, লোকনীতি ও ব্যক্তিস্বাদীনতা” শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। বর্তমান উদ্যোগকে বলা যেতে পারে অমর্ত্য সেনের সামাজিক চয়ন তত্ত্বের বিস্তৃত ও গভীরতর অন্বেষণ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, এবং যৌথভাবে উদ্বোধন করেন এমটিবি’র পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও এমটিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান । তাদের উপস্থিতি এমটিবি’র শিক্ষা, জ্ঞানচর্চা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক সাবিনা আলকায়ারে (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়), যিনি সক্ষমতা পদ্ধতি ও ভুটানের গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস (জিএনএইচ) নিয়ে বক্তব্য রাখেন। আলোচক হিসেবে অংশ নেন স্বাতী নারায়ণ ও ড. সাজেদা আমিন, যারা বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য, পরিবেশের ক্রমাবণতি, কল্যাণ ও অন্তর্ভুক্তির বহুমাত্রিক দিক নিয়ে আলোচনায় সমৃদ্ধ করেন।

আলোচনায় জোর দেওয়া হয় কল্যাণের বহুমাত্রিক ও দৃঢ় সূচক তৈরি করার প্রয়োজনীয়তার ওপর, যা দেখায় যে দারিদ্র্য কেবল আয়ের সীমাবদ্ধতা নয়; বরং এর সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়। অধ্যাপক আল-কায়ারে উল্লেখ করেন যে স্টিগলিৎজ–সেন–ফিতুসি কমিশন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি), এবং ভুটানের জিএনএইচ ইতিমধ্যেই উন্নয়ন নিয়ে বৈশ্বিক বিতর্কের ধারা পাল্টে দিয়েছে।

সমাপনী ভাষণে অধ্যাপক রেহমান সোবহান দারিদ্র্য বিমোচনকে কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং একে নৈতিক ও রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবে বোঝার ওপর গুরুত্ব দেন এবং নীতি প্রণয়ন ও কৌশল নির্ধারণে দারিদ্র্যের বহুমাত্রিক বাস্তবতাকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

“এই পাঠচক্র শুধুমাত্র একাডেমিক চর্চা নয়; এটি একটি বৈশ্বিক জ্ঞান আদান-প্রদানের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তরুণ, পণ্ডিত ও নীতিনির্ধারকরা একত্রিত হচ্ছেন—ব্যক্তিগত কল্যাণ ও সামাজিক কল্যাণকে আমাদের সময়ে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তা নতুন করে ভাবতে,” —বললেন আহমেদ জাভেদ চৌধুরী, বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিটি ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এর অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক।

আগামী ছয় মাসে এই পাঠচক্রে ১৩টি সেশনে ভাষণ প্রদান করবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পণ্ডিতরা। এর মধ্যে ড. প্রশান্ত কুমার পট্টনায়ক (ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রিভারসাইড) থাকবেন, যিনি পাঠচক্রটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই উদ্যোগ প্রতিফলিত করে বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের ১৭ বছরের বৌদ্ধিক যাত্রা এবং এমটিবি’র দৃষ্টিভঙ্গি— যা নতুন জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে তরুণদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নকে পরিপুষ্ট করে আসছে।

« নিউজ এ ফিরে যান